ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর চোখের যে বিষয়গুলোর প্রতি যত্নবান হতে হবে

ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর চোখের যে বিষয়গুলোর প্রতি যত্নবান হতে হবে

জন্মের পর থেকে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত একটি শিশু পর্যায়ক্রমে তার চোখ দিয়ে দেখতে শেখে। প্রথমে রং চিনতে শেখে, এরপর বিভিন্ন আকৃতি। একসময় কোনটা কোন জিনিস, সেটা চিহ্নিত করতে শেখে। শিশুর জন্মের পর থেকে এই ছয় বছর বয়স পর্যন্ত দৃষ্টির বিষয়ে তাই মা-বাবা কিংবা অভিভাবকদের যত্নবান হতে হবে।

শিশুদের চোখের যত্নে কী করবেন

১. শিশুকে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত টেলিভিশন দেখতে দেওয়া যেতে পারে। এ সময় অবশ্যই টেলিভিশন থেকে ৬-৮ ফুট দূরে বসে দেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। টিভির বা পর্দার খুব কাছে চলে গেলে তাকে বুঝিয়ে আবার দূরে এনে বসিয়ে দিতে হবে। দেখতে সমস্যা হলে শিশুর চোখ পরীক্ষা করাতে হবে।

২. শিশুদের হাতে সারা দিন মোবাইল কিংবা ট্যাব দিয়ে রাখা যাবে না। পড়াশোনার প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে ট্যাব ব্যবহার করতে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেটাও দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়। দীর্ঘ সময় ধরে ট্যাব বা মোবাইল ব্যবহার করার কারণে শিশুর দৃষ্টি কাছের জিনিসপত্র দেখা শেখে কিন্তু দূরের কিছু দেখা শেখে না।

৩. শিশুর জন্মের পর মা-বাবা যদি খেয়াল করেন শিশুর কোনো চোখ ভেতরের দিকে বা বাইরের দিকে সাময়িক বা সর্বদা বাঁকা, সে ক্ষেত্রে দ্রুত চোখের ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

৪. স্কুলে দেওয়ার আগে প্রতিটি শিশুর চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। দূরে কিংবা কাছে দেখতে কোনো সমস্যা আছে কি না, শিশুর কালার ভিশন, চোখের অ্যালাইনমেন্টে কোনো সমস্যা আছে কি না, জানতে হবে। তাই চোখের সামগ্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তবেই তাকে স্কুলে পাঠাতে হবে।

৫. স্কুলে পড়াকালে যদি শিশুর বোর্ড দেখতে সমস্যা হয়, বোর্ডের লেখা ঠিকমতো না তুলে কিংবা হঠাৎ করে ক্লাস পারফরম্যান্স খারাপ হতে থাকে, তবে ক্লাসের শিক্ষকের সঙ্গে পরামর্শ করে শিশুর চোখ পরীক্ষা করিয়ে চশমা দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। প্রতি চার-ছয় মাস পর পর চশমার পাওয়ার পরীক্ষা করাতে হবে।

৬. শিশুর চোখ লাল হলে, চোখ দিয়ে পানি পড়লে, চুলকালে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

৭. সবুজ শাক, হলুদ ফল, রঙিন সবজি নিয়মিত শিশুর খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।

৮. আলো কম আছে, এমন স্থানে শিশুদের পড়তে দেওয়া যাবে না। শিশুর পড়ার জায়গায় সব সময় পরিমিত উজ্জ্বল আলো থাকতে হবে। নয়তো শিশু পড়তে বসলে মাথাব্যথা, চোখব্যথা কিংবা চোখ দিয়ে পানি পড়ার সমস্যায় ভুগতে পারে।

শিশুর চশমার ব্যাপারে কিছু কথা

পরিষ্কার দেখার জন্য একজন শিশুর চশমার প্রয়োজন হতেই পারে। সেটা মাইনাস পাওয়ার কিংবা প্লাস পাওয়ারের হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চশমা বানিয়ে নিতে হবে। অনেকের একটা অস্বচ্ছ ধারণা আছে যে কিছুদিন চশমা পরার পর আর প্রয়োজন হবে না। আদতে এমনটা নয়। নিয়মিত চশমা পরতে হবে এবং নিয়মিত চোখের পাওয়ার চেক করাতে হবে ডাক্তারের কাছে। পাওয়ার সমন্বয়ের প্রয়োজন হলে ডাক্তার লিখে দেবেন। সে অনুযায়ী চশমার গ্লাস বদলে নিতে হবে। পাওয়ার জিরো হয়ে গেলে বা চশমার প্রয়োজন আর না হলে সেটা চিকিৎসকই বলে দেবেন। নিজে থেকে চশমা বন্ধ করে দিলে শিশুর দেখতে পাওয়ার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। শিশু চশমা পরতে না চাইলে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে, মাঝেমধ্যে ফ্রেম পরিবর্তন করে দিতে হবে।