গালফ ফুড ফেয়ারে প্রায় দেড় কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ পাচ্ছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো, প্রাণেরই ৪৭%

গালফ ফুড ফেয়ারে প্রায় দেড় কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ পাচ্ছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো, প্রাণেরই ৪৭%

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গালফ ফুড ফেয়ারে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ২ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি নিয়ে আলোচনা করেছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৪১ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ চূড়ান্ত করেছে তারা।

কোনো কোনো ক্রেতা নগদ ডলার দিয়েও রপ্তানি ক্রয়াদেশ চূড়ান্ত করেছেন। কারণ, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়ে যেতে পারে।

যেসব ক্রয়াদেশ চূড়ান্ত হয়েছে, তাঁর মধ্যে প্রাণ গ্রুপই পেয়েছে ৬৭ লাখ ডলারের কাজ, যা চূড়ান্ত হওয়া আদেশের ৪৭ দশমিক ৫২ শতাংশ।

গতকাল শুক্রবার শেষ হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী এই মেলা। এবারের মেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আমদানিকারক ও ক্রেতাদের কাছ থেকে খুব ভালো সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন এসব কোম্পানির কর্মকর্তারা। মেলায় অংশ নেয় খাদ্য উৎপাদন, বিপণন ও পরিবেশনের সঙ্গে যুক্ত ১২০ দেশের পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বাংলাদেশের ছিল ৩৯টি প্রতিষ্ঠান।

৩৯টি বাংলাদেশি কোম্পানির তিনটি ছিল প্রাণ গ্রুপের। সেগুলো হলো প্রাণ ডেইরি, প্রাণ অ্যাগ্রো ও এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং। এবারের মেলায় ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, ওশেনিয়া, পূর্ব এশিয়া, কানাডা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ৪৪০ ক্রেতা প্রাণের স্টল পরিদর্শন করে। এর মধ্যে ৩৫১ জন নতুন ক্রেতা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুস, নুডলস, ড্রাই কেক, সসসহ বিভিন্ন পণ্যের আদেশ দিয়েছেন ক্রেতারা।

প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুবাইয়ের মেলা বড় আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছে। এই মেলা রপ্তানি বৃদ্ধির নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। নতুন নতুন দেশের ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়েছে। তবে প্রচলিত পণ্যের পরিবর্তে আমাদের মূল্য সংযোজন করতে হবে। আমাদের ডিম ও মুরগি রপ্তানির দিকেও যেতে হবে, তাহলেই রপ্তানি বাড়বে। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে এর বিকল্প নেই।’

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আরও ছিল আকিজ গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান আকিজ বেকার্স ও আকিজ এফএমসিজি, সিটি গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান সিটি অটো রাইস অ্যান্ড ডাল ও রূপসী ফুডস। এ ছাড়া মেঘনা গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান তানভীর ফুডস ও মেঘনা বেভারেজ ৯টি স্টল নিয়ে মেলায় অংশ নেয়।

মেলায় অংশ নেওয়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো গ্লোব সফট ড্রিংকস, এএসটি বেভারেজ, এলিন ফুডস, লিলি অ্যাগ্রো, হিফস অ্যাগ্রো, এসিআই ফুডস, বেঙ্গল মিট, কাজী ফুড, মাসুদ অ্যাগ্রো, ইফাদ, বসুন্ধরা ফুডস, বোম্বে, ড্যানিশ, আহমেদ ফুডস, স্টার লাইন, ফারহানা অ্যাগ্রো, জিসান ফুড, আরিফ অ্যাগ্রো, হালদা ভ্যালি, দেশবন্ধু ফুড, রংপুর ডেইরি, হক ফুড, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বনফুল, কিশওয়ান স্ন্যাকস, টিকে ফুড, ফেভারিটা লিমিটেড, থাই ফুড, অভিজিৎ ফুড ও এস অ্যান্ড বি নাইস ফুডস।

এবারের মেলায় প্রচলিত পণ্যের পাশাপাশি নতুন পণ্যের সম্ভার তুলে ধরে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রাণ তুলে ধরে অ্যালোভেরা জুসের বিভিন্ন খাদ্যপণ্য। এ ছাড়া টিকে গ্রুপ তাদের নতুন খাদ্যপণ্য নিয়ে যায়।

প্রাণ গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (রপ্তানি) গোলাম রসুল বলেন, ‘দাম বেড়ে যেতে পারে—এই আশঙ্কায় ফিলিস্তিনের একজন ক্রেতা নগদ ১০ হাজার ডলার নগদ দিয়ে গেছেন, যা আমাদের অবাক করেছে।’

মেলার চতুর্থ দিনে বাংলাদেশের স্টল পরিদর্শন করেন আরব আমিরাতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যে যত বেশি বৈচিত্র্য আনতে পারবে, ততই রপ্তানি বাড়বে। এই মেলায় তারা ভালো সাড়া পেয়েছে।