সেতুর এপাশ থেকে ওপাশের গাড়ি দেখা যায় না। এ ছাড়া সেতুর সড়ক বেশি মসৃণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের খারুভাজ সেতুর পশ্চিম দিক এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত ৮ দিনের ব্যবধানে দুটি পৃথক দুর্ঘটনায় ১২ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
আহত হয়েছেন ৬০ জন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সেতুর এপাশ থেকে ওপাশের গাড়ি দেখা যায় না। এ ছাড়া সেতুর পশ্চিম পাশের সড়ক বেশি মসৃণ করে করা হয়েছে। এ জন্য সেখানে কমবেশি দুর্ঘটনা ঘটছে।
গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, তারাগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে পূর্ব-পশ্চিমে চলে গেছে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক। উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে শলেয়াশাহ বাজার থেকে ৩০০ মিটার পশ্চিম দিকে খারুভাজ সেতুর অবস্থান। পুরোনো সেতুটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় পুরোনো সেতুর গা ঘেঁষে দক্ষিণে এক বছর আগে নতুন করে সেতু নির্মাণ করা হয়।
খারুভাজ সেতুর দুই দিকে বাঁক রয়েছে। দুই পাশে পাথর ও বিটুমিন দিয়ে পিচঢালাই করা হয়েছে। পশ্চিম পাশে বৃষ্টির পানিতে চকচক করছে সড়কের বিটুমিন। সড়কের দুই ধারে পরে আছে দুর্ঘটনায় ভেঙে যাওয়া গাড়ির কাচ, নাটবল্টুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র।
মহাসড়কের পাশের খারুভাজ নদীরপাড় গ্রামের ওবায়দুল হক (২৬) বলেন, ‘সেতুটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এখানে কমবেশি দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। সেতুর পশ্চিম পাশের মোকার সড়ক একেবারে সমান। মনে হয়, পাথরের চেয়ে অতিরিক্ত বিটুমিন দিয়েছে। বৃষ্টি কিংবা রোদ হলেই ওই স্থান খুব পিচ্ছিল হয়। তার জন্য হয়তো চালকেরা তখন এখানে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তাই প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে মানুষ মারা যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের বিষয়টি দেখা উচিত।’
নদীরপাড় গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল (৫৫) সেতু ও সড়ক দেখিয়ে বলেন, ‘এইঠে নয়া সেতু আর আস্তা কোনা হইছে থাকি গাড়ি উল্টে, এক্সিডেন হয়্যা মানুষ মরেছে। গভীর রাইতো নিন্দ থাকি উঠি হামাক লাশ টানাটানি করি নাগে। এক্সিডেনের পর সরকারি লোক আইসে, রাস্তা কোনা দেখি যায়। কিন্তু এক্সিডেন আর বন্ধ হয় না।’
ওই গ্রামের আলমগীর হোসেন (৩২) বলেন, আগের সেতুটা থেকে সড়কটা সোজা ছিল। নতুন সেতুটি বাঁকা করে বানানো হয়েছে। সেতুর এপাশ থেকে ওপাশের গাড়ি দেখা যায় না। এ জন্য পশ্চিম অংশে কমবেশি দুর্ঘটনা ঘটছে।
ওই সড়ক দিয়ে নিয়মিত ট্রাক চালান তারাগঞ্জের মেনানগর গ্রামের মোস্তাফিজার রহমান(৩০)। তিনি বলেন, খারুভাজ নদীর খারুভাজ সেতুর পশ্চিম অংশ থেকে থেকে প্রায় ৭০ মিটার সড়কে বিটুমিনের পরিমাণ অনেক বেশি। বৃষ্টির সময় সেখানে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে খুব সমস্যা হয়।
তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মাদ মাহাবুব মোরশেদ বলেন, মহাসড়কের অন্য স্থান ‘ডিবিএসটি’ পদ্ধতিতে পিচঢালাই দেওয়া হলেও সেতুটির পশ্চিম মোকায় প্রায় ৭০ মিটার অংশজুড়ে তা করা হয়নি। ডিবিএস পদ্ধতিতে সড়ক ঢালাই দিলে সড়ক কিছুটা অমসৃণ থাকে। এর ফলে সহজে গাড়ি ব্রেক করে বা থামে। এ ছাড়া সেতুর দুই দিকে বাঁক রয়েছে।
বাঁকের কারণে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে কোনো গাড়ি এলে তেমন দেখা যায় না। অনেকেই বলছেন এ কারণে হয়তো দুর্ঘটনা ঘটছে। কী কারণে ওই স্থানে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে, তার কারণ তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান করছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহাবুব আলম মুঠোফোনে বলেন, ডিবিএসটি পদ্ধতিতে সেতুর পশ্চিম পাশে কার্পেটিং করার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। মূলত ঘুম চোখে বেপরোয়াগতিতে গাড়ি চলাচলের কারণে ওই স্থানে দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কের ওই স্থানে গাড়ির গতি কমানোর জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।